ভাওয়াল ইসলামিক ক্যাডেট একাডেমী ২০২৫ – ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উজ্জ্বলতায় অনুপ্রেরণার এক দীপ্তিময় ভোর


বাদিক: রাকিব হোসাইন, গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুর – ০৭-০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিঃ, নবীন উদ্যম ও প্রতিভার সমারোহে ভাওয়াল ইসলামিক ক্যাডেট একাডেমীর প্রাঙ্গণে বার্ষিক ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এক অসাধারণ প্রদর্শনী মঞ্চস্থ হয়। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই একাডেমী, নরোত্তমপুর, কাপাসিয়া, গাজীপুরের এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে, ছাত্র-ছাত্রীদের ক্রীড়া ও সৃষ্টিশীলতা উদ্দীপনায় আজ এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করে।

লেখক তৌফিক সুলতান স্যার এর লেখা সমূহ ||Writer Taufiq Sultan Sir's writings || Writer Towfiq Sultan Sir's writings ||كتابات الكاتب توفيق سلطان سير ||作家陶菲克·苏丹先生的著作 ||作家 Towfiq Sultan Sir の著作 ||Écrits de l'écrivain Towfiq Sultan Sir ||Yazar Towfiq Sultan Sir'in yazıları ||लेखक तौफीक सुल्तान सर की रचनाएँ || Al Towfiqi, Welftion CEO, আল তৌফিকী পরিবার, হাউজ অফ আল তৌফিকী, ওয়েল্ফশন নগরী,Welftion CEO,House Of Al Towfiqi, News,খবর,সংবাদ, লেখক, কবি,লেখা

অনুষ্ঠান ও সূচীপত্র

প্রথম সকাল সূর্যোদয়ের সাথে সাথে, একাডেমীর প্রাঙ্গণে কোরআনের তেলাওয়াতের মাধুর্যে শুরু হয়, যেখানে শিক্ষার্থী ও অতিথিরা ঐশ্বরিক বাণীর মহিমায় মুগ্ধ হন। এরপর জাতীয় পতাকার উত্তোলন ও শপথ বাক্য পাঠের মাধ্যমে একটি সংগঠিত ও নীতিনিষ্ঠ পরিবেশ তৈরি হয়।

সূচী অনুযায়ী মূল আয়োজন:

  • ৯:৩০ মিনিট: কোরআন তেলাওয়াত
  • ৯:৩৫ মিনিট: জাতীয় পতাকা উত্তোলন
  • ৯:৪০ মিনিট: শপথ বাক্য পাঠ
  • ১০:১০ মিনিট: সভাপতিদের ও বিশেষ অতিথিদের আসন গ্রহন
  • ১০:১৫ মিনিট: অতিথি বরণ ও মাল্যদান
  • ১০:৩০ মিনিট: ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা উদ্বোধন
  • দুপুর ১টা-২টা: মধ্যাহ্ন বিরতি ও নামাজ
  • ২:০০-৩:০০টা: বক্তব্য পর্ব
  • ৩:০০-৪:০০টা: পুরষ্কার বিতরণ
  • সমাপ্তি ঘোষনা: সমন্বিত আয়োজনে

আজকের দিনে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা শারীরিক দক্ষতা ও দলগত চেতনার উৎকর্ষ প্রমাণ করে। আগামীকালের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই চেতনা আরও প্রাণপ্রদভাবে প্রকাশ পাবে বলে সকলের মধ্যে আশাবাদ বিদ্যমান।

বিশিষ্ট অতিথিরা ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব

অনুষ্ঠানটি মার্জিত সাজানো হয় নানা বিশেষ অতিথির আগমনে। সভাপতিত্বে থাকেন জনাব মোঃ অহিদুজ্জামান, সঙ্গেই সহ-সভাপতি জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ও জনাব মোঃ মোখলেসুর রহমান। এছাড়া, সমাজ ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—

  • বিশেষ অতিথি:
    • জনাব মোঃ কাজল বন্দুকসী (সভাপতি, ৫নং ওয়ার্ড, নৃপবলস)
    • জনাব মোঃ রেফাত উল্লাহ (বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সরোতনপুর)
    • জনাব রৌশন আরা বিথি (সদস্য, বারিবাব ইউনিয়ন পরিবল)
    • মাওলানা জসিম উদ্দিন (প্রবাসী, সৌদি আরব)
    • জনাব মোঃ সাইদুর রহমান সেজান (বারিষাব ইউনিয়ন ছাত্রদল)
    • জনাব সৈকত আকন্দ ও জনাব নাহিদ আকন্দ (বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, পাগটিয়া চালা বাজার)
    • জনাব আনোয়ার হোসেন (বিশিষ্ট সমাজ সেবক)
    এবং আরও অনেক সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এক অনন্য সমবেত শক্তি প্রকাশ করেন।

প্রধান স্পিচ: জনাব মোঃ তৌফিক সুলতান স্যারের অনুপ্রেরণামূলক বাণী

দ্বিতীয় পর্বে, জনাব মোঃ তৌফিক সুলতান স্যার – সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মুখপাত্র – তাদের শিক্ষণীয় বক্তব্যে উপস্থিত সকলকে গভীর ভাবে অনুপ্রাণিত করেন। তাঁর বক্তব্যের শুরুর লগ্নেই তিনি কোরআনের সেই সুপ্রসিদ্ধ আয়াত স্মরণ করিয়ে দেন, “إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا” (নিশ্চয়ই কষ্টের পর সুলভতা আছে)। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা কেবল শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ নয়, বরং আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরতার এক অনন্য মঞ্চ।

স্যার বলেন,

"আজ আমরা শুধু খেলাধুলা ও সৃজনশীলতার উদযাপন করছিনা, বরং আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর রহমত ও করুণার অবিচ্ছিন্ন উপস্থিতি উপলব্ধি করছি। আমাদের নীতিগত শিক্ষা, অধ্যবসায় ও একতা আমাদের জীবনে এক অনন্ত আশার দীপপ্রজ্জ্বল করে। যেমন, আমাদের প্রিয় নবী করিম (সা.) এর এক হাদীসে বলা হয়েছে, 'মুমিনের শক্তি ও ধৈর্যই তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ'। এই উপদেশ আমাদেরকে প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণে সাহস জোগায়।"

তিনি আরও উল্লেখ করেন,

"প্রতিটি সফলতার পেছনে আছে একান্ত অধ্যবসায় ও সঠিক দিশার নির্দেশনা। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যেমন আমরা শারীরিক সক্ষমতা যাচাই করি, তেমনি সাংস্কৃতিক মঞ্চে আমরা আমাদের সৃজনশীলতা ও মানসিক দৃঢ়তা প্রকাশ করি। আল্লাহ তায়ালার এই মহান বাণী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, সে কখনো ব্যর্থ হবেনা।'"

স্যার তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের এক অনন্য বার্তা পৌঁছে দেন—শারীরিক দক্ষতার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁর কথায় ছিল এক সুস্পষ্ট আহ্বান, যে প্রত্যেকেই যেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক মূল্যবোধ ও ধৈর্য ধারণ করে, যেমন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধুর্যে দেখা যায়।


Bica


আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপট ও অনুপ্রেরণার মিশন

জনাব তৌফিক সুলতান স্যারের বক্তব্যে ইসলামী মূল্যবোধ ও আধুনিক চ্যালেঞ্জের সমন্বয় স্পষ্ট। তিনি শিক্ষা দেন, “আল্লাহ‌র নাম নিয়ে শুরু করাই আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি।” তাঁর কথায় স্পষ্ট ছিল, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুধু প্রতিযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আত্ম-উন্নয়নের, ধৈর্য ও পরিশ্রমের এক মহৎ উদাহরণ।

তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন,

"আমাদের প্রিয় কোরআনের আয়াত – 'فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا' – আমাদের শেখায়, কঠিন সময়ের পর অবশ্যই আসবে সহজতা। এই বাণী আমাদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে প্রেরণা যোগায়।"

সত্যিই, তাঁর এই প্রেরণামূলক বাণী তৎক্ষণাৎ শ্রোতাদের মনে এক দীপ্তি জাগিয়ে তোলে। শিক্ষার্থীরা তাঁর কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে, নিজেদের প্রতিভা ও পরিশ্রমের মূল্য উপলব্ধি করে, আর শিক্ষক ও অভিভাবকরা তাঁর উপদেশে বিশ্বাস ও উৎসাহের এক নতুন দিগন্ত দেখতে পান।

প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণীর ঝলক

প্রাত্যহিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, যেখানে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট, ও অন্যান্য খেলার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের প্রতিভা উন্মোচন করে, তা এক বিশেষ আকর্ষণ ছিল। প্রতিযোগিতার শেষে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে, উজ্জ্বল সাফল্যের স্বীকৃতিতে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ও দলকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণীর মুহূর্তগুলো ছিল আনন্দ ও উদ্দীপনার এক অপূর্ব মিলনস্থল, যেখানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা একসাথে সাফল্যের স্বাদ উপভোগ করেন।

অনুষ্ঠান পরিচালনা ও সংগঠনের উৎকর্ষ

সমগ্র অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা, সময়ানুবর্তিতা ও সুশৃঙ্খল পরিচালনায় একাডেমীর শিক্ষকবৃন্দ ও পরিচালনা পরিষদের অবদান অতি প্রশংসনীয়। জনাব মোঃ সাকিব, জনাব মোঃ জিসান সহকারী শিক্ষক এবং জনাব মোঃ তৌফিক সুলতান স্যারের নির্দেশনায় সকল কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়। ফলাফল সংরক্ষণ থেকে শুরু করে পুরষ্কার বিতরণ, প্রতিটি পর্যায়ে ছিল দক্ষ কর্মদক্ষতা ও আন্তরিক সহযোগিতার চমকপ্রদ প্রদর্শনী।

সমাপনী মন্তব্য

সারা দুই দিনের এই অনুষ্ঠানে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, শিক্ষা ও ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও নৈতিক মূল্যবোধের সমন্বয়ই তরুণ প্রজন্মকে সঠিক দিশা প্রদানের অন্যতম উপায়। জনাব তৌফিক সুলতান স্যারের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য, কোরআনের আয়াত ও নবী করিম (সা.) এর হাদীস থেকে উদ্ভূত শিক্ষা আজকের যুবসমাজকে প্রেরণা জোগায়, জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ় বিশ্বাস ও অধ্যবসায়ের মূল্য শিখায়।

এই দুই দিনের উজ্জ্বল উদযাপনে, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র শারীরিক ও মানসিক দক্ষতার পরীক্ষা ছিল না; বরং এটি ছিল এক আত্মিক, সামাজিক ও নৈতিক পুনরুজ্জীবনের এক অনন্য উৎসব।

ভাওয়াল ইসলামিক ক্যাডেট একাডেমী এর এই উদ্যোগ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা, শৃঙ্খলা ও আন্তরিক মানবিক বন্ধনের সৃষ্টিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। আন্তর্জাতিক পত্রিকার প্রথম পেইজে প্রকাশিত এই সংবাদ প্রতিবেদন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের প্রতি আস্থা ও ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।

আল্লাহ আমাদের সকলের মঙ্গল করুন – “وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ” (এবং হয়তো তোমরা কিছু কিছু বিষয়ে ঘৃণা করবে, কিন্তু তা তোমাদের কল্যাণের জন্যই) [কুরআন, ২:২৮].


রাকিব হোসাইন, গাজীপুর প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংবাদ পত্রিকা

No comments: